ওটস খাওয়ার নিয়ম - কী কী কাজে লাগে ওটস

ওটস খাওয়ার নিয়ম ও ওটস কী কী কাজে লাগে তা আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকেই এই বিষয়ে খুব একটা ধারণা নাও রাখতে পারি। কিন্তু এটির উপকারিতা বা ব্যবহার জানতে আমরা সকলেই আগ্রহী।
ওটস খাওয়ার নিয়ম


আজকের আর্টিকেলে আমরা ওটসের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে চলেছি। তাই ওটস সম্পর্কে যদি আপনার মনে কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকুন। 

পেজ সূচিপত্রঃ ওটস খাওয়ার নিয়ম - কী কী কাজে লাগে ওটস

ওটস কী জিনিস বা ওটস কি কাজে লাগে

ওটস কী জিনিস বা ওটস কি কাজে লাগে তা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সঠিক ধারণা নাই। ওটস হচ্ছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি প্রাচীন শস্য যা স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য মানুষের কাছে বেশ সুপরিচিত। এটি বাংলা ভাষায় "জো" নামেও পরিচিত। আজকে আমরা ওটস এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা, পুষ্টি গুণাগুণ, রান্নার উপায় এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানবো। 

ওটসের পুষ্টি গুণাগুণ অত্যান্ত প্রশংসনীয়। এটি উচ্চ ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃধ। কেননা ওটস প্রায় ১০-১৫% ফাইবার দিয়ে গঠিত। এখানে থাকা বিটা গ্লুকান হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যে অনেক কার্যকরি। এছাড়াও ওটস স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে থাকে। যা পেশি গঠন ও মেটাবিলজমকে সমর্থন করে। এটি আমাদের ওজন কমানোর কাজে সাহায্য করে থকে।

এগুলোর পাশাপাশি ওটসে থাকা ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন ইত্যাদি শরীরের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করে থাকে। ওটসে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। শারীরিক মানসিক উভয় কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে ওটস সহায়ক। এক গবেষনায় দেখা গেছে ওটস নিয়মিত খাওয়ার কারণে উচ্চ রকচাপের ঝুঁকি কমে। 

ওটস ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি দীর্ঘ সময় ধরে তৃপ্তির অনুভূতি ধরে রাখতে সক্ষম বলে ক্ষুধা কম লাগে। ওটসে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকায় এটি ধীরে ধীরে রক্তের শর্করা স্তর বাড়াতে থাকে। তাই টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি নিরাপদ একটি খাবার। নিয়মিত ওটস খেলে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা উন্নত হওয়ার পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ওটস পাচনতন্ত্রের জন্যও অনেক উপকারী। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে। অন্ত্রের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে পারে। আবার ত্বক ও চুলের জন্যও ওটস উপকারী উপাদান। এটির এ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি গুণাবলী ত্বকের এলার্জি ও র‍্যাশ কমাতে সাহায্য করে। ত্বকে ওটসের পেস্ট ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে থাকে। এবং চুলকেও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে ওটস খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে ওটস খাওয়ার নিয়ম জানতে আমরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। কেননা আমরা আগেই জেনেছি ওটস আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে। এটিতে থাকা উচ্চ ফাইবার আমাদের ক্ষুধা কমিয়ে রাখে বলে আমরা অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারি। গবেষণায় দেখা যায়, সকালে নাস্তায় ওটস খাওয়া ওজন কমানোর জন্য কার্যকর। ওটসে থাকা (Beta- glucan) ক্ষুধা কমিয়ে রাখে ও দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে। 

ওটসে সাধারণত প্রোটিনের পরিমাণ তুলনামুলক ভাবে বেশি থাকে। যা পেশি গঠন ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ওটসে থাকা কম ক্যালোরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরে মেটাবলিজম বাড়াতে ও অতিরিক্ত চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে থাকে। ওটস শরীরে শক্তি ধরে রাখতে সক্ষম। অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারছি ওটস আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে অনেক কার্যকরি। এখন তাহলে ওজন কমাতে ওটস কীভাবে খাবেন তা জেনে নেওয়া যাক। 

সকালের খাবার, লাঞ্চ, স্ন্যাকস বা রাতের খাবার সব হিসেবেই ওটস খাওয়া যায়। ওটসের তৈরি সালাদ, স্মুদি, স্যুপ, পোরিজ ইত্যাদি সব কিছুই ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে। প্রতিদিন ৩০-৫০ গ্রাম ওটস গ্রহণ করা উপকারি। ওটস খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। যাতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে। 

সকালে ওটস খাওয়ার নিয়ম ও রাতে ওটস খাওয়ার নিয়ম

সকালে ওটস খাওয়ার নিয়ম ও রাতে ওটস খাওয়ার নিয়ম আমাদের সঠিক ধারণা রাখা দরকার। দিনের শুরুতেই নাস্তা হিসেবে ওটস খেলে সারাদিন শরীরে পুষ্টি ও শক্তি পাওয়া যায়। সকালের নাস্তা হিসেবে ওটসের পোরিজ বা স্মুদি খাওয়া যায়। কেউ চাইলে দুপুরে কিংবা বিকালেও ওটস খেতে পারে। এক্ষেত্রে ওটসের নানান রকম সালাদ বা স্যুপ বানানো যায়।
ওটস খাওয়ার নিয়ম
রাতের খাবার হিসেবেও অনেকেই ওটস খেয়ে থাকেন বা ওটস খেতে পছন্দ করেন। রাতের খাবারে ওটসকে হালকা ও সহজপাচ্য খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এটি শরীরকে হালকা রাখতে পারে এবং রাতের ঘুম ভালো হতেও সাহায্য করে। রাতের ওটস বানানোর জন্য চাইলে দুধ বা দই ব্যবহার করতে পারেন আবার বিভিন্ন ফলের সংমিশ্রণে সালাদ ও  বানাতে পারেন। 

ওটস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভুল ধারণাসমূহ 

ওটস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভুল ধারণাসমূহ গুলোর ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা জরুরী। কেননা ওটস খাওয়ার বিষয়ে আমাদের মধ্যে বেশ কিছু ভুল ধারণা রয়েছে যা অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে থাকে। এগুলো সম্পর্কে কিছু দিক আমরা এখন আলোচনা করবো। আমাদের অনেকের ধারণা ওটস শুধু সকালের নাস্তায় ব্যবহার করা যায়। কিন্তু আমরা উপরে আগেও জেনেছি যে ওটস যে কোনো সময় খাওয়া যাবে।

আরো পড়ুনঃ সাদা তিল খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

অনেকে সব ধরণের ওটসকে একই মনে করে থাকেন। কিন্তু বাজারে তিন ধরণের ওটস পাওয়া যায় এবং এই তিন ধরণের ওটসের মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে। এই ওটস গুলো হলো রোল্ড ওটস, স্টিল কাট ওটস ও ইনস্ট্যান্ট ওটস। প্রতেকটির পুষ্টি ও প্রস্তুত প্রণালী ভিন্ন ভিন্ন। আমাদের মধ্যে অনেকে ওটসকে শুধু স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। যা সম্পুর্ণ ভুল ধারনা। ওটস একটি পুষ্টিকর খাবার যা সব বয়সীর জন্য উপকারী। 

অনেকে মনে করেন যেকোনো ভাবে প্রস্তুতকৃত সকল ওটসের গুণাবলীই হয়তো এক। কিন্ত এটা সত্য নয়। প্রস্তুতির পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া করণের উপরেও অনেক সময় ওটসের পুষ্টি গুণ পরিবর্তিত হয়ে থাকে। ওটস অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। শরীরের প্রয়োজন অনুসারে সঠিক পরিমাণে সঠিক নিয়মে ওটস খাওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

ওটস কীভাবে তৈরি করতে হয়- সহজ ওটস রেসিপি 

ওটস কীভাবে তৈরি করতে হয় বা সহজ ওটস রেসিপি নিয়ে যদি আপনি চিন্তিত থাকেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আশা করি নিচে উল্লেখিত কয়েকটি সহজ ও সুস্বাদু রেসিপি গুলো আপনার উপকারে আসবে যা আপনি ঘরেই বানাতে পারবেন।

ওটস পোরিজঃ
উপাদান-
  • ১ কাপ রোল্ড ওটস 
  • ২ কাপ দুধ বা জল 
  • ১ টেবিল চামচ মধু বা চিনি (স্বাদ অনুযায়ী)
  • ১/২ কাপ ফল (কলা, আপেল, আঙ্গুর, বেরি ইত্যাদি)
  • বাদাম ও দারচিনি ( সাজানোর জন্য)
প্রস্তুত প্রণালীঃ একটি পাত্রে দুধ বা জল গরম করুন। গরম হওয়া দুধ বা জলে ওটস এবং স্বাদ মতো লবন যোগ করুন। ৫-৭ মিনিট পর্যন্ত মাঝারি আঁচে রান্না করুন, যতক্ষণ না তা ঘন হয়। এরপর মধু ব চিনির সাথে ফল ও বাদাম মিশিয়ে পরিবেশন করুন।
সহজ ওটস রেসিপি
ওটস স্মুদিঃ
উপাদান-
  • ১/২ কাপ রোল্ড ওটস 
  • ১ কাপ দুধ বা দই
  • ১টি কলা
  • ১ টেবিল চামচ মধু ( ঐচ্ছিক )
  • কিছু বরফ
প্রস্তুত প্রণালীঃ সকল উপাদান একসাথে ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করুন। মসৃণ হয়ে আসলে তা একটি গ্লাসে ঢালুন ও পরিবেশন করুন।

ওটস প্যানকেকঃ
উপাদান-
  • ১ কাপ রোল্ড ওটস (পাউডার করে)
  • ১ কাপ দুধ
  • ১ টি দিম
  • ১ টেবিল চামচ বেকিং পাউডার
  • ১ টেবিল চামচ মধু (ঐচ্ছিক)
  • সামান্য লবণ
প্রস্তুত প্রণালীঃ একটি পাত্রে সকল উপাদান একত্রিত করে ভালোভাবে মেশান। একটি প্যান গরম করে তাতে সামান্য তেল দিন। মিশ্রণটি প্যানের মধ্যে ঢালুন ও দুইদিক সোনালী রঙ হওয়া না পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর দুই সাইড সোনালী হয়ে আসলে ফল, মধু বা অ্যাপেল সিরাপ দিয়ে পরিবেশন করুন। 

ওটস সালাদঃ
উপাদান-
  • ১ কাপ সেদ্ধ ওটস 
  • ১/২ কাপ সবজি (গাজর, টমেটো, শসা ইত্যাদি)
  • ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
  • ১ টেবিল অলিভ অয়েল
  • লবণ ও মরিচ স্বাদ অনুযায়ী
প্রস্তুত প্রণালীঃ সেদ্ধ ওটস এবং সবজি একটি পাত্রে মিশিয়ে নিন। এরপর এতে লেবুর রস, অলিভ অয়েল, লবণ ও মরিচ যোগ করুন। ভালোভাবে মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

ওটস বারঃ
উপাদান-
  • ২ কাপ রোল্ড ওটস 
  • ১/২ কাপ মধু বা সিরাপ
  • ১/২ কাপ বাদাম বা শুকনো ফল (কিশমিশ) 
  • ১/২ কাপ নারিকেল বা চিনি মুক্ত ভ্যানিলা
প্রস্তুত প্রণালীঃ একটি পাত্রে সকল উপাদান একত্রে মিশান। একটি তেল মাখানো বেকিং ট্রেতে মিশ্রণটি চাপ দিয়ে সমান করে ছড়িয়ে দিন। ১৫-২০ মিনিট ৩৫০ ডিগ্রী ফারেনহাইটে বেক করুন। ঠান্ডা হলে ছোট ছোটো টুকরো করে কেটে পরিবেশন করুন।

ওটস নিয়ে আমাদের নানান প্রশ্ন

ওটস নিয়ে আমাদের নানান প্রশ্ন মনে আসতে পারে। কেননা ওটসের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে উপরে অনেক তথ্য জেনেছি। যা থেকে মানুষের মনে স্বভাবতই কিছু প্রশ্নের জন্ম হতে পারে। আমরা এখন সেগুলোরই উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো। 

ওটস কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখা যায়??
উঃ ওটস ১০-১২ ঘন্টা বা তার ও বেশি ভিজিয়ে রাখা যায়।

ওটস কতমাস থেকে খাওয়ানো যায়??
উঃ একটি শিশুকে চাইলে ৬ মাস বয়স থেকেই ওটস খাওয়ানো যাবে।

সবচেয়ে ভালো ওটস কোনটি??
উঃ রোলড ওটস সবচেয়ে ভালো ওটস হিসেবে পরিচিত। কেননা এটি দ্রুত বানানো যায় এবং এটি নরম ও সহজে হজম যোগ্য।

ওটস বেশি খাওয়া কি ক্ষতিকর??
উঃ হ্যাঁ, অতিরিক্ত যেকোনো কিছুই স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। বেশি পরিমাণে ওটস খেলে শরীরে কিছু কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য প্রয়োজন বুঝে নির্দিষ্ট পরিমাণ ওটস খাওয়া উচিত।

ওটস কী কোলেস্টরেল কমায়??
উঃ ওটসে থাকা ফাইবার আমাদের দেহের খারাপ কোলেস্টরেল যাকে লাইপোপ্রোটিন (LDL) বলা হয় সেটি কমাতে সাহায্য করে। 

শেষ কথা- ওটস খাওয়ার নিয়ম 

ওটস খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অনেক তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যাতে আপনারা এই বিষয়ে সঠিক ধারণা পেতে পারেন। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। ধন্যবাদ!






 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url