অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকার উপায়


বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে বছরের বেশির ভাগ সময়েই তীব্র গরমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এই অবস্থায় মানুষ নানা রকম রোগ বা শারীরিক দুর্বলতার শিকার হচ্ছে।


কিন্তু বিশেষ কিছু নিয়ম নীতি মেনে চলতে পারলেই এই সকল সমস্যা থেকে নিজেকে কিংবা পরিবারের সদস্যদেরকে সুস্থ রাখা সম্ভব। আর তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা অরিতিক্ত গরমে সুস্থ থাকার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানবো। 

পেজ সূচীপত্রঃ


গরমে প্রয়োজনীয় খাদ্যাভাস 

তীব্র গরমে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার অন্যতম মাধ্যম হলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সঠিক খাবার রাখা। কেননা বিভিন্ন খাদ্য বিভিন্ন রকম পুষ্টি গুণ বহন করে এবং সেই অনুযায়ি আমাদের দেহের তাপমাত্রা বজায় থাকে। কাজেই এই সময় শরীর ঠাণ্ডা থাকে এমন খাবার গ্রহন করা জরুরী। যেমন বিভিন্ন মৌসুমি ফল, শাকসবজি, ডাবের পানি, লেবু বা বিভিন্ন ফলের শরবত (প্রয়োজনে স্যালাইন), স্যুপ জাতীয় খাবার, ডিটক্স ওয়াটার ইত্যাদি।

এগুলা খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী হলেও কিছু খাদ্য পরিহার করতে হবে। যেমন বেশি মসলাজাতীয় খাবার, বাইরের ভাঁজাপোড়া, যেকোনো ধরনের জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড, চা / কফি, তেল চর্বি জাতীয় খাবার, দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি/লবণ ইত্যাদি। এই খাবার গুলো যতটা সম্ভব কম খেতে হবে কেননা অতিরিক্ত গরমে এগুলো খাবার বেশি খাওয়ায় শরীর আরো গরম হয়ে যাবে। যার ফলে অনেক সময় স্ট্রোকের আশঙ্কা তৈরি হয়।

এছাড়াও অতিরিক্ত গরমে আমাদের সবার মাঝে ঠান্ডা পানি পানের একটা বদভ্যাস দেখা যায়। কেউ কেউ আছেন ঠান্ডা পানি ছাড়া চলতেই পারে না। কিন্তু তারা অজান্তেই নিজেদের মারাত্মক ক্ষতি করে বসছেন। কেননা তীব্র গরমে ঠান্ডা পানি পানের ফলে আমাদের গলার তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। এবং সেখানে থাকা সুবিধাবাদী ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হয়ে নানা রকম রোগের সৃষ্টি করে। এজন্য চেষ্টা করতে হবে সাধারণ তাপমাত্রায় থাকা পানি পান করতে।

গরমে খাবার সংরক্ষণের দিকেও বিশেষ নজর রাখতে হবে। কেননা অতিরিক্ত গরমের কারণে খুব তাড়াতাড়ি রান্না করা বা যেকোনো খাবার নষ্ট বা পচে যায়। আর এই পচা খাবার পেটে গেলে ডায়রিয়াসহ পেটের, ত্বকের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে খাদ্যকে যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি। খাওয়া শেষে সব খাবার ফ্রিজে রাখার অভ্যাস করতে হবে কিংবা জাল দিয়ে রাখতে হবে। বাইরেই খোলা খাবার খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।

অতিরিক্ত গরমে পোশাক পরিচ্ছদের ধরণ 

অতিরিক্ত গরমে চাইলেই যেকোনো ধরণের পোশাক পরে বাইরে বা বাসায় কাজ করা যায় না। এজন্য এই সময় আরামদায়ক পোশাক নির্বাচন করতে হয়। যেমন হালকা পাতলা কাপড়ের তৈরি জামা, হালকা রঙের পোশাক, সুতির পোশাক, ঢিলা ঢালা পোশাক ইত্যাদি।এছাড়াও কালো বা ডিপ কোনো রঙের পোশাক পরিহার করা প্রয়োজন। খুব বেশি আঁটসাঁট পোশাক পরিধান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ছোট এবং বয়স্কদের ক্ষেতে বিশেষ নজর রাখতে হবে। তাদের জন্য যেটা আরামদায়ক পোশাক সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। পোশাক পরিচ্ছদ ঠিক মতো পরিষ্কার রাখাও খুব জরুরি। গরমে দেহের অতিরিক্ত ঘাম বের হয়। এসময় পোশাক ভালোমতো পরিষ্কার না থাকলে যেগুলা বাজে গন্ধের সৃষ্টি করে পাশাপাশি বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। কাজেই পোশাক নির্বাচন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আরও পড়ুন : অতিরিক্ত গরমে নবজাতক শিশুর যত্ন

অতিরিক্ত গরমে চুল ও ত্বকের যত্ন

চুলের যত্ন: নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই চুল সৌন্দর্যের একটি বিশেষ অংশ। উভয়েই চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় বেশ তৎপর হয়ে থাকেন। কিন্তু এই তীব্র গরমে অনেকেই চুলের সঠিক যত্ন নিতে পারেন না বা জানেন না। অতিরিক্ত গরম এবং সেই সাথে প্রচন্ড ধূলাবালির কারণে আমাদের চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে বিবর্ণ হয়ে যায়। অতিরিক্ত ঘামার ফলে মাথায় বিভিন্ন ধরনের ফুসকুড়ি বা খুশকি দেখা দেয়।
 
এগুলোর হাত থেকে রক্ষা পেতে বা এগুলো দূর করতে প্রথমেই যা করতে হবে তো হলো মাথা পরিষ্কার রাখা। সপ্তাহে ৩-৪ বার ভালো ভাবে শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার রাখতে হবে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া উপায়ে তৈরি ক্লিনজার বা হেয়ার প্যাক ইউজ করতে হবে। চুল বেশিক্ষন ভেজা অবস্থায় না রেখে দ্রুত শুকিয়ে নিতে হবে। এছাড়াও বাইরে বের হওয়ার সময় চেষ্টা করতে চুল ঢেকে বের হওয়ার যেনো রোদ ও ধুলাবালি না লাগে। এজন্য ছাতা বা স্কার্ফ ব্যবহার করতে হবে।

ত্বকের যত্ন: অতিরিক্ত গরমে তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ত্বকের নানান সমস্যা দেখা দেয়। শরীর থেকে অনেক ঘাম বের হওয়ার কারণে ত্বকে বিভিন্ন ঘামাছি বা ব্রণের জন্ম হয়। এজন্য অতিরিক্ত মেকাপ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। তেল জাতীয় খাবার অধিক পরিমাণে গ্রহণেও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা হয় তাই এগুলা পরিহার করতে হবে। সারাদিনে বার বার পানি দিয়ে মুখ হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।

আরও পড়ুন: ত্বকের যত্নে সহজ ৫ টি উপায়।

হিটস্ট্রোকের লক্ষ্মণ ও প্রতিরোধ

অতিরিক্ত গরমের কারনে বর্তমানে প্রায়ই অনেক মানুষের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনা যাচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে দিন দিন এই সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে রোদে কাজ করার কারণে সহজেই মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে মানুষ অস্বাভাবিক ভাবে দুর্বলতা অনুভব করে পাশাপাশি বমি ভাবসহ মাথা ঘোরা। এছাড়াও মাথা ব্যাথা, চোখে ঝাপসা দেখা, মাংস পেশীতে টান ধরা ইত্যাদি দেখা দেয়।

কোনো ব্যক্তি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত ঠান্ডা কোনো জায়গা বা ছায়ায় নিতে হবে। রোগীর আশেপাশে বাতাসের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে জামা কাপড় হালকা করে পানি দিয়ে ঘাড় মাথা মুছতে হবে। অনেকে অবস্থা খুব বেশি খারাপ হয়ে গেলে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে তখন যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

ছোট বড় যে কেউ এই হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। এজন্য সকলেরই উচিত এই কথা মাথায় রেখে বাইরে চলাফেরা করা।অতিরিক্ত গরমে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে সকাল ১০-৩/৪ পর্যন্ত অত্যাধিক রোদ থাকে। এসময় যতটা সম্ভব ঘরের ভিতরে বা অফিসের মধ্যে থেকে কাজ করতে হবে। অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম বা ভারী কাজ করা থেকে এই সময় বিরত থাকা উত্তম।
 

আরও পড়ুন: গরমে যেসকল ফলের চাষ লাভজনক

পরিশেষে:

একটি সুস্থ সাভাবিক জীবন সকলের কাছেই কাম্য। এজন্য প্রয়োজন বিশেষ দিক নির্দেশনা মেনে জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলা। আর সেদিক বিবেশনা করেই আজকের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সাজানো হয়েছে। অতিরিক্ত গরমের এই ওয়েদারে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url