চিরতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
চিরতা খাওয়ার নিয়ম ও এর ২০ টি উপকারিতা নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য
প্রস্তুত করা হয়েছে। চিরতা কী বা এটি আমাদের কী কী কাজে লাগে তা জানতে পুরো
আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সাথে থাকুন।
শরীরে জন্য উপকারী এই ঔষুধী ভেষজের ব্যবহার অনেক প্রাচীন। স্বাদে তেঁতো এই চিরতা
স্বাস্থ্যগুণে ভরপুর হওয়ায় এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও উপকারিতা আমাদের জানা
উচিত।
পেজ সুচিপত্রঃ চিরতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
- চিরতা কী কিংবা চিরতার কাজ কী
- আমাদের দেহে চিরতার উপকারিতা গুলো কী কী
- জ্বর, সর্দি বা কাশি নিরাময়ে চিরতা
- কেটে যাওয়া স্থান বা ক্ষত শুকাতে চিরতা
- চুল পড়া কমাতে চিরতা
- চুলকানি নিরাময়ে চিরতা
- হাঁপানি দূর করতে চিরতা
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিরতা
- চিরতা খাওয়ার নিয়ম কী
- জ্বর, সর্দি বা কাশি নিরাময়ে চিরতা খাওয়ার নিয়ম
- কেটে যাওয়া স্থান বা ক্ষত শুকাতে চিরতা ব্যবহারের নিয়মঃ
- চুল পড়া কমাতে চিরতা ব্যবহারের নিয়ম
- চুলকানি নিরাময়ে চিরতা ব্যবহারের নিয়ম
- হাঁপানি রোগে চিরতা খাওয়ার নিয়ম
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিরতা খাওয়ার নিয়ম
- চিরতা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর
- শেষ কথা- চিরতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
চিরতা কী কিংবা চিরতার কাজ কী
চিরতা কী কিংবা চিরতার কাজ কী তা আমাদের অনেকের কাছেই জানা আবার অনেকেই আমরা
এই বিষয়ে খুব একটা জানিনা। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের মানুষের কাছে এটি খুব একটা
পরিচিত হওয়ার কথা না। বিভিন্ন রোগের নিরাময়ক হিসেবে
আয়ুর্বেদশাস্ত্রে চিরতার বিশেষ স্থান রয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় অঞ্চল
ভেদে এর বিভিন্ন নাম প্রচলিত থাকতে দেখা যায়।
যেমন বাংলায় এটিকে চিরতা বলা হয় এর তিক্ত স্বাদের কারণে। হিন্দিতে এই
গাছের নাম চিরেইতা পাঞ্জাবিতেও এটিকে একই নাম অর্থাৎ চিরেইতা বলা
হয়। ইংরেজি নাম Chitretta, তামিল নাম নিলাভেম্বু এবং আরবি নাম
কাসাবুজাজারেয়ী। এছাড়াও চিরতাকে বিটার স্টিক বা ইস্ট ইন্ডিয়ান বেলমনি
হিসেবেও পরিচিত হতে দেখা গেছে।
হিমালয়ের এই উদ্ভিদ উচ্চস্থানে জন্ম নিয়ে থাকে। সবচেয়ে
বেশি চিরতার গাছ দেখা যায় কাশ্মীর থেকে ভুটান পর্যন্ত বিস্তৃত
অঞ্চল। এটির কান্ড লম্বা ও সোজা হয়, ছাল মোটা হয়।প্রাকৃতিকভাবে এটি
এন্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যালকালয়েড, জ্যান্থোনস, চিরাটানিন, চিরাটল,
পামিটিক এসিডের বা গ্লাইকোসাইড এসিডের মতো পুষ্টিগুণ সম্পন এটি ফলে এটি
অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর ভেষজ। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় এই চিরতা জাদুর মতো কাজ
করে থাকে।
আমাদের দেহে চিরতার উপকারিতা গুলো কী কী
আমাদের দেহে চিরতার উপকারিতা গুলো কী কী তা নিয়ে আমরা এখন বিস্তারিত জানবো।
বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত এই ঔষধী গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Swertia
chiravita. শরীরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় উপকারে চিরতা কাজ করে থাকে।
জ্বর, সর্দি বা কাশি নিরাময়ে চিরতাঃ জ্বর, সর্দি বা কাশির
মতো সাধারণ রোগ সারাতে চিরতা একটি কার্যকারী উপাদান। কোন
ব্যক্তি চাইলে ঘরে বসে চিরতার সাহায্যে এসকল রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে।
ছোট থেকে বড় সকলের জন্য এটি কার্যকরী। বয়স্কদের জ্বর
প্রতিরোধে এটি অধিক প্রভাবশালী। চিরতার মধ্যে যারা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এই সকল রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
কেটে যাওয়া স্থান বা ক্ষত শুকাতে চিরতাঃ চিরতার
সাহায্যে আমাদের শরীরের কোন স্থান কেটে গেলে বা ক্ষত হলে তা নিরাময় করা
যায়। অনেক সময় যেকোনো কারণে আচর লেগে বা কাটাকাটি করতে
যেয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে যায় এবং দেখা যায় তা শুকাতে অনেক সময়
লাগছে। অনেকের ক্ষেত্রে সেই ক্ষত থেকে ঘা সৃষ্টি হয়। তাই এগুলো
থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চিরতার ব্যবহার কার্যকরী।
চুল পড়া কমাতে চিরতাঃ চুল পড়ার সমস্যা আমাদের কাছে
অতি পরিচিত। কম বেশি সকলে আমরা এটির কারণে চিন্তিত হয়ে
থাকে। এমনকি দিন দিন অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণে অনেকের মাথায় টাক পড়তে
শুরু করেছে। এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যও চিরতা সাহায্য করে
থাকে। চিরতার সঠিক ব্যবহারে চুল পড়া রোধ করা সম্ভব।
চুলকানি নিরাময়ে চিরতাঃ আমাদের অনেকের
শরীরে চুলকানির মারাত্মক সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যা দূর করতে
চিরতার তেল ব্যবহার করা যায়।
হাঁপানি দূর করতে চিরতাঃ হাঁপানির সমস্যা আমাদের
আশেপাশে তাকালেই অনেকের মধ্যে দেখা যায়। এই হাঁপানি চিকিৎসায় ঔষধি গাছ
হিসেবে চিরতার বেশ খ্যাতি রয়েছে। তাই আপনার আশেপাশে কেউ যদি হাঁপানি
রোগের সমস্যায় ভোগে তাহলে তাকে চিরতা খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিরতাঃ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত
রোগীর সংখ্যা বলতে গেলে দিন দিন বেড়েই চলেছে। সারা
বিশ্বেই ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর পরিমাণ বৃদ্ধি
পাচ্ছে।ডায়াবেটিস একবার হলে তা সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব না। কিন্তু
চাইলেই বিভিন্ন নিয়মে এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই এই
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে চিরতা ব্যবহার করতে পারেন।
চিরতা খাওয়ার নিয়ম কী
চিরতা খাওয়ার নিয়ম কী তা নিয়ে আমাদের মনে হয়তো অনেক প্রশ্ন
রয়েছে। যেহেতু এর অনেক উপকারি দিক রয়েছে তাই এটি সঠিকভাবে
ব্যবহার করার জন্য আমরা অনেকেই আগ্রহী কিন্তু চিরতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
সম্পর্কে না জানার কারণে আমরা এটির উপকারিতা ভোগ করতে ব্যর্থ
হই। তাই চলুন চিরতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে নেওয়া
যাক।
চিরতার সমস্ত অংশই বলতে গেলে রোগ নিরাময়ে সহায়ক। কিন্তু এটির শিকড়ের
কার্যকারিতা একটু বেশি। পরিষ্কার করা চিরতার পাতলা ডালপালা সারারাত পানিতে
ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করা যায়। আবার কেউ কেউ চাইলে অর্ধেক পানি সকালে ও
অর্ধেক পানি রাতে ঘুমানোর আগে পান করতে পারেন। চিরতার জল তৈরি করার জন্য
চিরতার শুকনো ২টি কাঠি ২ কাপ জলে ফুটিয়ে নিতে হবে।
যতক্ষণ পর্যন্ত জল কমে অর্ধেক না হয়ে আসে ততক্ষণ জাল দিতে হবে। এরপর জল
অর্ধেক হয়ে এলে তা ছেঁকে নিলেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে যাবে। এই জল দিনে ৩-৪ চা
চামচ পান করা ভালো। এই চিরতা চাইলে ভিজিয়ে খাওয়ার পরিবর্তে ব্লেন্ড করে বা
গুড়ো করেও খাওয়া যায়। অনেকেই হাঁপানির সমস্যা দূর করতে চিরতার গুড়ো ব্যবহার
করে থাকেন।
চিরতার রস বানানোর জন্য এটি ১৫-৩০ মিলি বা ২-৩ টেবিল চামচ গরম পানিতে
মিশিয়ে তার সাথে লবঙ্গ বা দারচিনি যোগ করে করতে পারেন। এটি তেঁতো হওয়ার
কারণে এটির সাথে মধু মিশিয়ে নেওয়া যায়। চিরতার মধ্যে থাকা স্যালিসিলিক
নির্যাস একটি টনিক হিসেবে কাজ করে থাকে। এই নির্যাস দিনে দুইবার সেবন করতে
পারলে শারীরিক দুর্বলতা দূর করা সম্ভব।
জ্বর, সর্দি বা কাশি নিরাময়ে চিরতা খাওয়ার নিয়মঃ জ্বর সর্দি বা কাশি প্রতিরোধে আট থেকে দশ
গ্রাম চিরতা আট থেকে ছয় কাপ পানিতে সিদ্ধ করে দুই থেকে তিন কাপ পরিমাণ
করতে হবে। এই পানি ছেঁকে সকালে ও বিকালে অর্ধেক পরিমাণ করে খেতে
হবে। কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এ পানি ব্যবহারে ডাক্তারের
পরামর্শ নেওয়া জরুরী.
কেটে যাওয়া স্থান বা ক্ষত শুকাতে চিরতা ব্যবহারের নিয়মঃ এক কাপ গরম পানিতে চিরতার ডালপালা বা গুঁড়ো ফুটিয়ে নিতে
হবে। এরপর ঘুমানোর আগে সারারাত তা ভিজিয়ে রাখতে হবে সকাল বেলা চিরতা ভেজানো
পানিটি ছেঁকে নিয়ে ক্ষত স্থানে ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিতভাবে তিন
থেকে চার দিন এটি ফলো করতে পারলে দ্রুতই ভালো একটি সমাধান পাওয়া
সম্ভব।
চুল পড়া কমাতে চিরতা ব্যবহারের নিয়মঃ ১ কাপ পানি গরম
করে তাতে ৫ থেকে ৭ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রাখতে হবে। সারারাত এটি ভিজিয়ে
রাখার পর সকালবেলা ভালো করে ছেঁকে নিয়ে মাথায় শ্যাম্পুর মতো
ব্যবহার করতে হবে। এক থেকে দুই সপ্তাহ নিয়মিত এটি ব্যবহারে চুল পড়ার
সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করা যায়।
চুলকানি নিরাময়ে চিরতা ব্যবহারের নিয়মঃ ২০ থেকে ২৫
গ্রাম চিরতা হালকা পানি দিয়ে পাটায় বেঁটে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড
করে নিতে হবে। এরপর উক্ত পেস্টটি একটি কড়াইয়ে নিয়ে ১০০ গ্রাম
পরিমাণ সরিষার তেলে দিয়ে জাল দিতে হবে। তেল ফুটতে শুরু
করলে ফেনা দেখা যাবে। উক্ত ফেনা কমে গেলে চুলা বন্ধ করে দিতে
হবে। এই সময় খেয়াল রাখতে হবে তেল যেন পুড়ে না যায়।এবার তেলটি ছেঁকে
নিয়ে শরীরের যেসব জায়গায় চুলকানি জনিত সমস্যা রয়েছে সেখানে মালিশ
করতে হবে। কিন্তু চুলকানির স্থানে যদি ক্ষত বা কাটা থাকে তাহলে এই
তেল ব্যবহার করা যাবে না।
হাঁপানি রোগে চিরতা খাওয়ার নিয়মঃ হাঁপানি দূর করতে
চিরতা খাওয়ার নিয়ম হলো হাফ গ্রাম চিরতা প্রথমে গুঁড়ো করে নিতে
হবে। এরপর তার সাথে মধু মিশিয়ে নিয়ে খেতে হবে।এভাবে খাওয়ার ফলে
কয়েকদিনের মধ্যেই ভালো ফলাফল পাওয়ার আশা করা যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিরতা খাওয়ার নিয়মঃ রক্তে
গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসও বৃদ্ধি পায়। তাই
রক্তে এই গ্লুকোজ বা চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিরতা ভিজিয়ে
রাখা পানি সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
চিরতা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর
১/ চিরতা কতদিন খাওয়া যায়??
উঃ চিরতা একটানা ১৫ দিনের বেশি খাওয়া উচিত না।
২/ প্রতিদিন চিরতা খাওয়া যাবে কি??
উঃ হ্যাঁ, সমস্যার ধরণ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে প্রতিদিন চিরতা খাওয়া যাবে।
৩/ চিরতা ও কালমেঘ কী একই??
উঃ না। চিরতা ও কালমেঘ আলাদা আলাদা জিনিস।
৪/ চিরতা কীভাবে কাজে লাগে??
উঃ চিরতায় থাকা রাসায়নিক উপাদান ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই
করতে সক্ষম।
৫/ চিরতা কী কী কাজে আসে??
উঃ রক্তশূন্যতা দূর করতে, বমি ভাব দূর করতে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, কৃমির
সমস্যা সমাধানে, পেটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে, ত্বকের সমস্যা দূরীকরণে
ইত্যাদিতে চিরতা কাজ করে থাকে।
শেষ কথা- চিরতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
চিরতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করার
মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আজকের
আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। ধন্যবাদ!
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url