হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন কোন খাবারে
হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে তা নিয়ে আমাদের আজকে আর্টিকেলে থাকছে
বিস্তারিত আলোচনা। কেননা রক্তস্বল্পতা কিংবা এটি জনিত বিভিন্ন রোগে আমাদের
আশেপাশে অনেক ব্যক্তি আক্রান্ত হচ্ছে।
দিন দিন এই সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে এটির সুচিকিৎসার পাশাপাশি আমাদের
খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেও এটিকে প্রতিরোধ করা জরুরী। এগুলো নিয়ে জানতে আজকের
আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পেজ সূচিপত্র: হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন কোন খাবারে
- হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন কোন খাবারে তার তালিকা
- হিমোগ্লোবিন বাড়াতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
- হিমোগ্লোবিন বাড়াতে লৌহযুক্ত খাবার
- হিমোগ্লোবিন বাড়াতে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার
- হিমোগ্লোবিন বাড়াতে ফাইবার জাতীয় খাবার
- হিমোগ্লোবিন বাড়াতে অ্যামিনো এসিড এবং প্রোটিন
- হিমোগ্লোবিন বাড়াতে ফলিক অ্যাসিড
- হিমোগ্লোবিন বাড়াতে ডার্ক চকলেট
- হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলো কী কী
- একটুতেই শারীরিক ক্লান্তি অনুভব
- নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা অনুভব
- হাত-পা বা শরীরের বিভিন্ন অবশেষ শীতলতা অনুভব
- নখ ও চুলের সমস্যা এবং খাবারের প্রতি অনাগ্রহ
- মাথা ব্যথা ও বাড়তি রক্তচাপ
- শেষ কথা - হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন কোন খাবারে
হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন কোন খাবারে তার তালিকা
হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন কোন খাবারে তার তালিকা জানা থাকলে আমরা সহজেই রক্তস্বল্পতা
থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারবো। সুষম খাদ্য আমাদের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য
করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে।
তাই এসকল খাবারের সমন্বয়ে একটি সঠিক খাদ্যভাস গড়ে তোলা খুবই জরুরী। নিচে
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে যেসকল খাবার সবচেয়ে কার্যকরী তা দেওয়া হলো।
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: আমাদের রক্তে হিমগ্লোবিন
বাড়াতে বা তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আয়রন। তাই এটির অভাবে
অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হতে পারে। এই আয়রন উৎসভেদে দুই ধরনের হয়ে থাকে।
একটি হলো হিম আয়রন যা প্রাণিজ উৎস থেকে পাওয়া যায় এবং আরেকটি হলো নন হিম আয়রন
অর্থাৎ না উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আসে।
- হিম আয়রন জাতীয় খাবার - মাছ, মাংস, ডিম, মুরগির যকৃত, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি।
- নন হিম আয়রন জাতীয় খাবার - বিভিন্ন শাক যেমন পালং শাক, লাল শাক, মেথি, ডাল, মটর, সয়াবিন, খেজুর, তিল, শিম, শসা, বেদানা, লেবু ইত্যাদি।
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে লৌহযুক্ত খাবারঃ অনেক সময় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া অন্যতম কারণ হলো শরীরে
লৌহের ঘাটতি। কেননা আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে লৌহ গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখে। যে সকল খাবারে লৌহ পাওয়া যায় সেগুলো হলো- সামুদ্রিক
মাছ, জলপাই, কিসমিস, জলপাই, মুরগির কলিজা, ওটস, আপেল,
পেয়ারা, পেস্তা,
আখরোট, ব্রাউন রাইস, মসুর ডাল, ছোলা ইত্যাদি।
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে ভিটামিন সি জাতীয় খাবারঃ অনেক সময়
ভিটামিন সি এর অভাব হলেও রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। তাই
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের অভাব বা চাহিদা
পূরণ করা সম্ভব। এই জাতীয় খাবার গুলো হলো কমলা লেবু, লেবু,
পেয়ারা, টমেটো, আঙ্গুর, আমলা, স্ট্রবেরি, ব্রুকলি, মালটা,
নারিকেল ইত্যাদি। এগুলো লৌহ শোষণ করে রক্তের হিমোগ্লোবিন
বাড়াতে সাহায্য করে।
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে ফাইবার জাতীয় খাবারঃ ফাইবার
আমাদের শরীরে নানা রকম উপকারে আসে। এটি আমাদের হজমের সাহায্য করার
পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা জনিত নানান সমস্যা দূর করতেও সাহায্য
করে। তাই শরীরে ফাইবারের অভাব হলেও রক্তস্বল্পতা জনিত সমস্যা সৃষ্টি হতে
পারে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গুলো হলোঃ শাকসবজি, ডাল ফল, গম,
আলু, গোলমরিচ ও অন্যান্য মসলা, বাদাম ও বীজ ইত্যাদি।
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে অ্যামিনো এসিড এবং প্রোটিনঃ অ্যামিনো
অ্যাসিড জাতীয় খাবার আমাদের মাংসপেশি, ত্বক ও অন্যান্য
কার্যাবলী সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করার পাশাপাশি রক্ত বৃদ্ধি
করতেও সাহায্য করে কেননা এটি আমাদের শরীরের জন্য প্রোটিন তৈরি করতে
পারে। প্রোটিনের প্রধান উপাদান হল এই অ্যামিনো এসিড যা রক্তের সেল
বৃদ্ধি করতে বা তৈরি করতে সহায়ক।
অ্যামিনো এসিড জাতীয় খাবার গুলো হলো- গরুর মাংস, মুরগির
মাংস, মাছ, ডিম, দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার, বিভিন্ন
শস্য, ডাল এবং শাকসবজি। এই খাদ্য গুলো স্বাভাবিক ভাবেই রক্তের
কোষ উৎপাদন করতে, রক্তের সঞ্চালন ও অক্সিজেন পরিবহন করতে সাহায্য
করে। তাই সঠিক খাদ্যাভাসে এই উপাদানটি পরিমাণ মতো রাখা উচিত।
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে ফলিক অ্যাসিডঃ ফলিক অ্যাসিড বা
ফলেট রক্তের সেল উৎপাদনে সাহায্য করে। এটি এক প্রকার ভিটামিন বি
কমপ্লেক্স যারা লাল রক্ত কণিকা তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন
সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক, সরিষার শাক, সরিষার
শাক, ব্রকলি ইত্যাদি এবং বিভিন্ন ডাল ( মসুর ডাল, মটর
ডাল, সয়া), শস্য ( ব্রাউন রাইস, ওটস, গমের
পাউডার), ফলমূল, দুধ, ডিম ইত্যাদি থেকে এটি পাওয়া যায়।
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে ডার্ক চকলেটঃ শুনে অনেকের কাছে অবাক লাগতে পারে
কিন্তু এটি সত্য যে ডায়েট চকলেটের মাধ্যমেও আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি
করা সম্ভব।কেননা এতে থাকা বেশ কিছু উপাদান রক্ত বৃদ্ধিতে সহায়ক। যেমন
আয়রন, ফ্ল্যাভানল, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। এগুলো আমাদের রক্ত প্রবাহকে
উন্নত করতে পারে, রক্তের সঞ্চালন ও হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলো কী কী
হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলো কী কী সেগুলো জেনে রাখা বিশেষভাবে
জরুরী। কেননা আপনি যদি বুঝতেই না পারেন যে আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে
যাচ্ছে তাহলে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনে পদক্ষেপও গ্রহণ করতে
পারবেন না। অনেক সময় খেয়াল না করার জন্য নানা রকম অসুখ-বিসুখের সৃষ্টি
হতে পারে। তাই রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া যাকে অ্যানিমিয়া বলা
হয় এটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়া মানে রক্তের লাল কণিকা প্রোটিন কমে
যাওয়া। যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়
না এবং রক্তশূন্যতা শুরু হতে থাকে। এ রক্তশূন্যতার হিমোগ্লোবিন কমে
যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে আয়রনের অভাবকে বিশেষভাবে দায়ী করা যায়।এগুলো
ছাড়াও বিভিন্ন ভিটামিন কিংবা সুষম খাদ্যের
অভাবও দায়ী। অ্যানিমিয়ার লক্ষণগুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ
একটুতেই শারীরিক ক্লান্তি অনুভবঃ আমরা আগেই জেনেছি যে
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে
না। যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা
এবং একটুতেই ক্লান্তি এবং শক্তিহীনতা অনুভূত হয়। সাধারণ
কোনো কাজ করতে গেলেও দেখা যায় শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ছে বা পর্যাপ্ত শক্তি
পাচ্ছে না।
নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা অনুভবঃ হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণে
যেহেতু অক্সিজেনের মাত্রার পরিবর্তন হয়ে যায় তাই শ্বাস প্রশ্বাস নিতেও মানুষ
অসুবিধা বোধ করে। হাঁটা চলাসহ যেকোনো স্বাভাবিক কাজের
ক্ষেত্রেই দেখা যায় নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে।
হাত-পা বা শরীরের বিভিন্ন অবশেষ শীতলতা অনুভবঃ যদি
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায় তাহলে যথাযথভাবে রক্ত সঞ্চালন ব্যর্থ
হয়। এবং এটি হাত পা থেকে শুরু করে শরীরের যে কোন অংশকে শীতল করে
দিতে পারে। এছাড়াও শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেয়ে
সহজেই ঠান্ডা, সর্দি বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা
বেড়ে যায়।
নখ ও চুলের সমস্যা এবং খাবারের প্রতি অনাগ্রহঃ হিমোগ্লোবিন
কমে গেলে অতিরিক্ত পরিমাণে চুল ওঠার সমস্যাও সৃষ্টি হয়ে
থাকে। পাশাপাশি নখের বৃদ্ধিতে সমস্যা দেখা দেয়, নখ সাদা হয়ে যেতে পারে
বা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যেতে পারে। অনেক সময় অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত
ব্যক্তি খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বা খাবারের রুচি নষ্ট হয়ে
যায়।
মাথা ব্যথা ও বাড়তি রক্তচাপঃ হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায় রক্ত
অক্সিজেনের অভাব হয় মস্তিষ্কের অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। চার থেকে
প্রচন্ড মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও এটি থেকে
অবসাদ কিংবা অস্থিরতা ও মানসিক ক্লান্তি সৃষ্টি হতে পারে। যা
স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে থাকে।
শেষ কথা - হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন কোন খাবারে
হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন কোন খাবারে তা নিয়ে আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করার
চেষ্টা করেছি। উপরে উল্লেখিত কারণ গুলো দেখা দিলে অবশ্যই হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির
জন্য উপযুক্ত খাদ্যাভাস মেনে চলতে হবে। এগুলো মেনেও যদি কোনো কারণে
রক্তস্বল্পতা দূর করতে সমস্যা হয় তাহলে যতদ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে
হবে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। আপনাদের যেকোনো
মন্তব্য থাকলে নিচে কমেন্ট সেকশনে আমাদের জানাতে পারেন। ধন্যবাদ!
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url