বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের
সাথেই থাকুন। কেননা আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো বিটের বিভিন্ন উপকারিতা
এবং অপকারিতা।
বাংলাদেশে এই বিটরুট অনেক বেশি পরিচিত না হলেও আস্তে আস্তে তা পরিচিতি লাভ
করছে। যার কারণে মানুষের মধ্যে এটি নিয়ে নানান প্রশ্ন ও আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। চলুন
তাহলে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচীপত্রঃ বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- বিটরুট কী তা সম্পর্কে বিস্তারিত
- বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
- রক্তচাপ কমাতে বিটরুট
- কিডনি ও লিভার ডক্সিফিকেশন করতে বিটরুট
- স্নায়ুতন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিটরুট
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে বিটরুট
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিটরুট
- শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে বিটরুট
- ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত রাখতে বিটরুট
- ওজন কমাতে বিটরুট
- বিটরুট খাওয়ার কিছু অপকারিতা
- পেটের বিভিন্ন সমস্যা ঘটাতে পারে
- অতিরিক্ত শর্করা ও ক্যালরি কমিয়ে ফেলতে পারে
- মল-মূত্রের রং পরিবর্তন
- এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে
- ডায়াবেটিস রোগের জন্য বিটরুট খাওয়ার সতর্কতা
- নিউরোলজিক্যাল সমস্যা তৈরি করতে পারে
- কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে
- বিটরুট পাওডার খাওয়ার নিয়ম
- বিটরুটের কয়েকটি জনপ্রিয় রেসিপি
- শেষ কথা- বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
বিটরুট কী তা সম্পর্কে বিস্তারিত
বিটরুট কী তা সম্পর্কে বিস্তারিত প্রথমেই জেনে নেওয়া উচিত। কেননা কোনো কিছু
খাওয়ার আগে তা সম্পর্কে আমাদের সঠিক তথ্য জেনে রাখা জরুরী। এর ফলে আমরা উক্ত
জিনিসের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো। এখন তাহলে বিটরুট সম্পর্কে
জেনে নেওয়া যাক। বিট যার ইংরেজি নাম Beetroot. এটি একটি অত্যান্ত স্বাস্থ্যকর
ও পুষ্টিকর সবজি হিসেবে পরিচিত যা মূলত মাটির নিচে জন্মিয়ে থাকে। এটি গাঁড়
লাল বা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে।
পুর্বের তুলনায় বাংলাদেশে বর্তমানে এটি বেশ পরিচিতি লাভ করেছে এবং এটির চাহিদাও
বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যার কারণে কৃষকদের কাছে এটি পরিচিত হয়ে উঠছে এবং বেশ
কিছু এলাকায় এটির চাষ শুরু হয়েছে। যেমন বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম,
নাটোর, ময়মনসিংহ, নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জ এলাকায় এটির চাষ করা হয়। বিটরুটের জন্য
দোআঁশ মাটি বা বেলে দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী যার কারণে এই অঞ্চল গুলো বিট চাষের
জন্য উপযুক্ত।
বাংলাদেশে বিটের পাতা তরকারি হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি এটি সালাদ, স্যুপ বা জুস
করে খাওয়া হয়। বিশেষ করে যেসকল ব্যক্তি স্বাস্থ্য সচেতন তাদের কাছে এটি বেশি
পরিচিত। যদিও বাজারে বিটের চাহিদা সীমিত কিন্তু এটির বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে
মানুষ ধীরে ধীরে জানতে শুরু করেছে এবং ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে। ফলে ভবিশ্যতে
এটির চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতার ব্যাপারে আমরা এখন বিস্তারিত জানবো। বিটের নানান
স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকার কারণে এটি নিয়ে মানুষ এখন আরো সচেতন হচ্ছে। এটি
ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার
সমৃদ্ধ। নিচে বিটরুট খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
রক্তচাপ কমাতে বিটরুটঃ বিটরুটের মধ্যে থাকা একটু উপাদান হলো
নাইট্রেট। যা আমাদের রক্তনালির প্রসারণ ঘটাতে সাহায্য করে রক্ত সঞ্চালন উন্নত
করে এবং রক্তচাপ কমিয়ে থাকে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, বিটরুট খাওয়ার ফলে
অনেকের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমে গেছে বা দূর হয়ে গেছে। তাই যাদের উচ্চ
রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়ম মেনে এই বিটরুট খেতে পারেন।
কিডনি ও লিভার ডক্সিফিকেশন করতে বিটরুটঃ বিটরুট আমাদের লিভার পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে থাকে।এদের মধ্যে থাকা
শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটালাইন কিডনির সেলগুলোকে ক্ষতিকর উপাদান
থেকে রক্ষা করে। এটিতে থাকা ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন
সি কিডনির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও বিটরুটে প্রচুর
পরিমাণে ফলেট থাকে যা কিডনি রক্ষা করতে সাহায্য করে।
স্নায়ুতন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিটরুটঃ বিটরুটে থাকা
বিটাইন উপাদান মস্তিষ্কে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এটি আমাদের
স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। বিটাইন
এর সাথে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গুলো মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য
করে। তাই নিয়মিত বিটরুট খেলে স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকরিতা এবং স্নায়ু
সেলগুলোর সুস্বাস্থ্যতা বজায় রাখা সম্ভব।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে বিটরুটঃ আঁশ জাতীয় খাবার হওয়ায় বিটরুটে থাকা উচ্চ
ফাইবার মানব দেহের হজম শক্তি ঠিক করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের অন্ত্রের জন্য
উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে। বিটরুটের
জলীয় উপাদান আমাদের শরীরকে হাইড্রাইটেড রাখতে এবং পেট পরিষ্কার করে খাবার
হওয়ার জন্য সহায়তা করে। এজন্য হজমের সমস্যা থাকলে তা দূর করার জন্য বিটরুট
খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিটরুটঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কাজেও
বিটরুট বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করতে পারে। বিটরুটে থাকা উপাদান হঠাৎ করে
শর্করা বৃদ্ধি রোধে কাজ করে থাকে। বিটরুটে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে
তাই এটি রক্তের গ্লুকোজের স্তরকে স্থির রেখে শর্করা শোষণের হারকে কমিয়ে
দেয়। এছাড়াও এটিতে থাকা বিভিন্ন উপাদান ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
পারে যা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে বিটরুটঃ বিটরুটে থাকা বিভিন্ন উপাদান
শরীরের এনার্জি স্তরকে বাড়াতে পারে। গবেষণা অনুযায়ী এটি প্রমাণিত যে
বিটরুটের জুস ব্যায়ামের সময় খেলে স্ট্যামিনা বৃদ্ধি পায় যা ক্লান্তি কমায়
এবং শক্তির বাড়ায়। এছাড়াও বিদ্যুড়ে থাকে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬,
মিনারেলস ইত্যাদি যার শরীরের শক্তি উৎপাদনে সহায়ক। এটি আমাদের শরীরের
মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে।
ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত রাখতে বিটরুটঃ বিটরুটে উচ্চ পরিমাণে জলীয়
উপাদান থাকে যা আমাদের ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের
ত্বক মসৃণ ও কোমল হয়। এটিতে থাকা ভিটামিন এ ও সি এবং অন্যান্য মিনারেলস আমাদের
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে মৃত কোষ দূর করতে বা পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
বিটরুটে থাকা নাইট্রেট উপাদানটি রক্তনালী প্রসারিত করে যা আমাদের ত্বকের রক্ত
সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল রাখে।
ওজন কমাতে বিটরুটঃ বিটরুট হলো কম ক্যালরি যুক্ত খাবার। যার
ফলে এটি ওজন কমানোর জন্য একটি আদর্শ খাবার হিসেবে পরিচিত। উচ্চ ফাইবারের সমৃদ্ধ
বিটরুট আমাদের ক্ষুধা কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে থাকে। এবং আমাদের শরীরের
মেটাবলিজম বাড়িয়ে তোলায় অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে।
বিটরুট খাওয়ার কিছু অপকারিতা
বিটরুট খাওয়ার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত জানবো। কেননা উপরে
এতক্ষণ আমরা বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। যেহেতু সব কিছুর
ক্ষেত্রেই উপকারী দিকের পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও থাকে তাই সব দিকেই আমাদের
খেয়াল রাখা জরুরী। যদিও বিট একটি স্বাস্থ্য উপকারী খাবার কিন্তু অতিরিক্ত
খাওয়ার ফলে কিংবা নিয়ম না মেনে খাওয়ার ফলে এটির অপকারিতা থাকতে
পারে।
পেটের বিভিন্ন সমস্যা ঘটাতে পারেঃ অতিরিক্ত পরিমাণে বিটরুট ভাত
খেলে পেটে গ্যাস, ডায়রিয়া কিংবা পেট ফাপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকেই
আছে যারা খুব বেশি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের অভ্যস্ত নয় তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত
পরিমাণে বিদ্যুৎ খাওয়া উচিত নয়। উচ্চ ফাইবারের কারণে অনেক সময় হজমের সমস্যাও
তৈরি হতে পারে।
অতিরিক্ত শর্করা ও ক্যালরি কমিয়ে ফেলতে পারেঃ ওজন কমানোর জন্য
অনেকেই এই বিটরুটকে আদর্শ খাবার হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। এটি সত্য যে এটি
আমাদের শরীরের শর্করার মাত্রা সঠিক স্তরে বজায় রাখতে এবং অতিরিক্ত ক্যালরি
কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে বিটরুট খেলে আমাদের শরীরের শর্করার
হার অতিরিক্ত পরিমাণে কমে যেতে পারে আবার অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়ার বিভিন্ন
সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মল-মূত্রের রং পরিবর্তনঃ আমরা আগেই জেনেছি বিটরুটে বিটেনিন নামক
একটি উপাদান থাকে যেটি আমাদের বিভিন্ন উপকারে এসে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত
পরিমাণে এই উপাদান আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে মল এবং মূত্র লাল কিংবা গোলাপী রঙে
পরিণত হতে পারে। যদিও এটি মারাত্মক কোন সমস্যা বা জটিলতা না। কিন্তু অনেকেই এই
পরিবর্তন দেখে ঘাবড়ে যেতে পারেন।
এলার্জি সৃষ্টি করতে পারেঃ কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দেখা গেছে
যে বিটরুট খাওয়ার ফলে তারা এলার্জি জনিত নানান সমস্যায় ভুগে থাকে। অনেকের
ত্বকে চুলকানি বা লাল লাল ভাব দেখা দেয়। আবার গলা ফুলে যাওয়া বা গলার ভিতরেও
চুলকানির সৃষ্টি হয়। এজন্য বিটরুট খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এ
বিষয়টি।
ডায়াবেটিস রোগের জন্য বিটরুট খাওয়ার সতর্কতাঃ বিটরুটে থাকা
বিভিন্ন উপাদান বিশেষ করে ফাইবার বা ভিটামিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য
উপকারী উপাদান হিসেবে বিবেচিত। তবে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের
জন্য ভালো নয় কেননা এটিতে প্রাকৃতিক ভাবে চিনি তাকে যা শরীরে বেশি প্রবেশ করলে
শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে দিতে পারে। আবার অনেকেই এটি খাওয়ার সময় অতিরিক্ত
ভাবে চিনি ও মিষ্টি জাতীয় উপাদান মিশিয়ে থাকে যার ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
নিউরোলজিক্যাল সমস্যা তৈরি করতে পারেঃ বিটরুট রান্না করে খাওয়ার
সময় যদি সঠিক পন্থা অবলম্বন করা না হয় তাহলে এটিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া
সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যা থেকে বিভিন্ন সময় নিউরোলজিক্যাল সমস্যা বা
রোগ যা স্নায়ুতন্ত্র জনিত অর্থাৎ মস্তিষ্কের ক্ষতি বা চিন্তা আচরণে সমস্যার
সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় তীব্র মাথাব্যথার কারণও ঘটিয়ে থাকে। তাই অতিরিক্ত
পরিমাণে বিটরুট খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো।
কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারেঃ বিটরুটে থাকা উচ্চ অক্সালেট অনেক
সময় কিডনিতে পাথরের সৃষ্টি হওয়ার কারণ হতে পারে। অর্থাৎ বেশি পরিমাণে বিটরুট
খেলে কিডনিতে পাথর হওয়া সম্ভাবনা থাকে।তাই জন্য যারা বিশেষ করে কিডনির বিভিন্ন
রোগে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে বিটরুট খাওয়ার সময় ডাক্তারের বিশেষ পরামর্শ
নেওয়া প্রয়োজন।
বিটরুট পাওডার বানানোর ও খাওয়ার নিয়ম
বিটরুট পাওডার বানানোর ও খাওয়ার নিয়ম জানার জন্য অনেকেই জিজ্ঞাসা করে থাকেন।
কেননা বিটরুটের পাউডার পুষ্টিকর একটি উপাদান। সহজেই এটি বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া
যায়। তাই সুস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে অনেকই নিজেদের খাবারের তালিকায় বা
ডায়েটে বিটরুটের পাউডার রাখেন। চলুন তাহলে এই বিটরুটের পাউডার বানানোর ও খাওয়ার
সঠিক নিয়ম সম্পর্কে এখন জেনে নেওয়া যাক।
বিটরুটের পাউডার বানানোর নিয়মঃ প্রথমেই আমাদের মাঝারি আকারের ৪-৫ টি
বিটরুট নিয়ে ভালো ভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে যেনো কোনো ময়লা
না থাকে। এরপর সেগুলো ছিলে ছোটো ছোটো টুকরো করে কেটে নিতে হবে। কেননা পাউডার করার
জন্য ছোটো করে টুকরা করা হলে তা তাড়াতাড়ি শুকাবে। কেউ চাইলে এটি সেদ্ধ করেও
নিতে পারেন। এটা করার কারণে শুকাতে সময় আরো কম লাগার পাশাপাশি পুষ্টিগুণ বজায়
থাকবে।
এরপর সেগুলো শুকানোর জন্য দুইটি পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। একটি হলো ওভেনের
মাধ্যমে এবং অন্যটি হলো রোদে শুকানোর মাধ্যমে। ওভেনে ৫০-৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
তাপমাত্রায় বিটরুটের টুকরো গুলো মচমচে না হওয়া পর্যন্ত হিট করে নিতে হবে।
রোদে শুকানোর ক্ষেত্রেও এগুলো মচমচে না হওয়া পর্যন্ত শুকাতে হবে। এতে দুই থেকে
তিন দিন সময় লাগতে পারে কিন্তু আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে তা কম বেশিও হতে পারে।
এরপর শুকিয়ে যাওয়া বিটরুট গুলো পাউডার করার জন্য একটি ব্লেন্ডার বা পাটা ব্যবহার
করতে হবে। সেগুলো ভালোভাবে গুঁড়ো হয়ে গেলে একটি এয়ারটাইট পাত্রে এটি সংরক্ষণ করতে
হবে। এটি সঠিক নিয়ম মেনে বানাতে পারলে প্রায় ১ বছর পর্যন্ত ভালো থাকবে। তবে দ্রুত
সময়ের মধ্যে এটি ব্যবহার করে নেওয়া ভালো তাহলে বেশি উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।
বিটরুটের পাওডার খাওয়ার নিয়মঃ এতোক্ষণ তো তাইলে বিটরুট পাউডার বানানোর
নিয়ম জানা হলো! এখন তাইলে এটি কী কী উপায়ে খেতে পারেন তা সম্পর্কে জেনে নেওয়া
যাক! সকালে বা বিকালে এটি খাওয়া ভালো তবে আপনি চাইলে যেকোনো সময়েই এটি খেতে
পারবেন। কিন্তু খালি পেটে না খাওয়ায় ভালো কেননা এতে অনেকের ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা
দেখা দিতে পারে।
সাধারণত ১-২ চা চামচ বিটরুট পাওডার প্রতিদিন খাওয়া ভালো। কিন্তু কোনো স্বাস্থ্য
সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী। এটি দুধ, পানি বা সালাদে
মিশিয়ে খাওয়া যায়। এক গ্লাস গরম পানি বা দুধে ১ চা চামচ বিটরুট পাওডার
মিশিয়ে খুব সহজেই এটি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা যাবে। আবার কোনো ফলের রসের
সাথে মিশিয়ে জুস বানিয়েও খেতে পারেন। চাইলে দুধ, কলা, মধু ও বিটরুট পাওডার দিয়ে
শেক বানিয়েও খাওয়া যাবে।
বিটরুটের কয়েকটি জনপ্রিয় রেসিপি
বিটরুটের কয়েকটি জনপ্রিয় রেসিপি সম্পর্কে নিশ্চয় এখন জানতে আগ্রহী আপনারা!
বিটরুটের একাধিক রেসিপি রয়েছে যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং
পুষ্টিকর। আমাদের দেশে দিন দিন এটির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে এটির নিত্য
নতুন রেসিপি অনেকের কাছেই দেখা যাচ্ছে। চলুন তাহলে সেগুলো সম্পর্কে কিছু
ধারণা নেওয়া যাক!
বিটরুটের সালাদঃ বিটরুটের সালাদ সবচেয়ে সহজ একটি খাবার এবং পুষ্টি
সমৃদ্ধ। এটি বানানোর জন্য বিটরুট, শসা, গাজর প্রয়োজন। এগুলো একসাথে কুচি করে
কেটে নিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর লেবুর রস, লবণ, অলিভ ওয়েল ও গোলমরিচ দিয়ে
মিশিয়ে নিন। তাহলেই এটি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত এখন সহজেই এটি উপভোগ করতে পারবেন।
বিটরুটের স্যুপঃ বিটরুটের স্যুপ বিশেষ করে শীতের সময় বেশ জনপ্রিয়। এটি
শরীর উষ্ম রাখাতে সাহায্য করে এবং আমাদেরকে পুষ্টি দেয়। এটি বানানোর জন্য
বিটরুট, গাজর, পেঁয়াজ ছোটো করে কেটে নিন। এরপর সেগুলো একটি প্যানে একত্রিত করে
সেদ্ধ করে নিন। সেদ্ধ হয়ে গেলে তা ব্লেন্ড করে নিয়ে স্যুপে পরিণত ক্রুন। এরপর
লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
বিটরুটের জুসঃ বিটরিটের জুস একটি শক্তি প্রদানকারী পানীয়। এটি বানানোর
জন্য বিটরুট এবং পছন্দমতো যেকোনো ফল কেটে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। প্রয়োজন
অনুজায়ী পানি বা বরফ অ্যাড করুন। এরপর চাইলে মধু বা লেবুর রস অ্যাড করতে পারেন।
তাহলেই এটি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এখন এটি ঠাণ্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।
বিটরুটের ভর্তাঃ বিটরুটের ভর্তা বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় রেসিপি। এটি
বানানোর জন্য বিটরুটের খোসা ছাড়িয়ে সেদ্ধ করে নিন। চাইলে ছোটো ছোটো টুকরা করে
নিয়েও সেদ্ধ করতে পারেন। অন্যদিকে একটি প্যানে তেল গরম করে রসুন ও পেঁয়াজ
বাদামি করে ভেঁজে নিন। এরপর এগুলো একত্র করে ভর্তার মতো মিশিয়ে নিন। এসময়
প্রয়োজন মতো লবণ, মরিচ, ধনেপাতা মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে বিটরুটের
ভর্তা।
শেষ কথা- বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা এতক্ষণ বিস্তারিত আলোচনা
করেছি। বিটরুটের এমিতেই বিভিন্ন উপকারী উপাদানে গঠিত কিন্তু নিয়ম মেনে না
খেলে এটি থেকে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে না তা বলা যায় না। তাই জন্য যেকোনো
খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই এটির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জেনে নিয়ে নিয়ম বুঝে খেতে
হবে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। আপনাদের কোনো মন্তব্য
থাকলে নিচে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন। ধন্যবাদ!
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url